গাজায় গণহত্যা ঢাকতে নতুন পাঁয়তারা ইসরাইলের
- By Jamini Roy --
- 10 January, 2025
গত ১৫ মাস ধরে গাজায় নির্বিচারে হামলা চালিয়ে আসা ইসরাইলি বাহিনী যুদ্ধাপরাধের অভিযোগের মুখে রয়েছে। এ ধরনের অভিযোগের প্রতিবাদে ও নিজ সেনাদের বাঁচানোর লক্ষ্যে এবার নতুন সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসরাইল। তারা ঘোষণা করেছে, যুদ্ধাপরাধের তদন্ত থেকে সেনাদের রক্ষা করতে গণমাধ্যমে সেনাদের নাম ও পরিচয় প্রকাশ না করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
ফিলিস্তিনপন্থি সংগঠনগুলো ইতিমধ্যেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ৫০টি যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ দাখিল করেছে। ব্রাজিল, ফ্রান্স, শ্রীলংকা, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস, সার্বিয়া, আয়ারল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং গ্রিক সাইপ্রাসের আদালতে এসব অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে। ফিলিস্তিনপন্থি সংগঠন হিন্দ রাজাব ফাউন্ডেশন সম্প্রতি এক ইসরাইলি সেনার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে, যে সেনা ব্রাজিলে অবকাশ যাপন করতে গিয়ে নিরীহ শিশু হত্যার অভিযোগে পড়েছে।
এ ঘটনার পর ইসরাইলের সামরিক বাহিনী জরুরি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে, যাতে যুদ্ধাপরাধের দায়ে অভিযুক্ত সেনাদের নাম ও চেহারা গোপন রাখা হয়। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ইসরাইলি বাহিনী আশা করছে, তাদের সেনাদের বিরুদ্ধে তদন্ত থেকে কিছুটা মুক্তি পাওয়া যাবে।
নতুন নিয়ম অনুযায়ী, ইসরাইলের সেনাদের সাক্ষাৎকার দেয়ার সময় তাদের নাম, ছবি এবং পরিচয় প্রকাশ করা যাবে না। বিশেষভাবে কর্নেল বা নিচের পদমর্যাদার সেনাদের ক্ষেত্রে এই নিয়ম কার্যকর হবে, যেখানে এর আগে কেবল পাইলট ও বিশেষ বাহিনীর সদস্যদের জন্য এমন নিষেধাজ্ঞা ছিল। এর ফলে ইসরাইলি সেনাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের তদন্ত আরও জটিল হতে পারে।
ইসরাইলের সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র জানিয়েছেন, এই নিয়মটি এখন থেকে প্রতিটি যুদ্ধক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে, এবং যুদ্ধক্ষেত্রে সেনাদের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করার ওপরও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে।
এদিকে, ফিলিস্তিনপন্থি সংগঠন হিন্দ রাজাব ফাউন্ডেশন দাবি করছে, তারা থাইল্যান্ড, শ্রীলংকা, চিলি এবং অন্যান্য দেশেও ইসরাইলি সেনাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চালাচ্ছে। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী যুদ্ধাপরাধী সেনাদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে।
এছাড়া, ইসরাইলি সেনাদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তাদের পরিবারের সদস্যরা। ইসরাইলের সরকারকে লেখা চিঠিতে তারা বলেছেন, যদি তাদের সন্তানের কোনো ক্ষতি হয়, তবে এর দায় পূর্ণরূপে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকেই নিতে হবে।
এই নতুন পদক্ষেপটি ইসরাইলের সামরিক বাহিনীর জন্য একটি কৌশল হিসেবে দেখা যেতে পারে, যাতে যুদ্ধাপরাধের দায় থেকে তারা নিজেদের সেনাদের বাঁচাতে পারে। তবে, আন্তর্জাতিক আদালতে এবং বিশ্ব রাজনীতিতে এর কেমন প্রভাব পড়বে তা এখনো নিশ্চিত নয়।
এছাড়া, গাজার জনগণের জন্য দীর্ঘদিন ধরে চলা এই হামলা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা পুরো বিশ্বে আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। ইসরাইলের নতুন সিদ্ধান্তকে গণমাধ্যম ও আন্তর্জাতিক মহলে সমালোচনা করা হতে পারে, যেখানে বহু দেশ ও মানবাধিকার সংগঠন গাজার মানুষের জন্য ন্যায্য বিচার দাবি করছে।